এবার লিওনেল মেসি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর থেকে একটা দৃশ্য খুব পরিচিত হয়ে গেছে। খেলা যে স্টেডিয়ামেই হোক না কেনো, অধিকাংশ দর্শকের গায়ে থাকে মেসির জার্সি। কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম লেগে ইন্টার মায়ামির বিপক্ষে ম্যাচে যেন এমন কিছু না হয়, তাই আগের দিনই একটি বিবৃতিতে দিয়ে ন্যাশভিলের সমর্থকদের মেসির জার্সি পরে মাঠে আসতে নিষেধ করেছিল ক্লাবটি।
কিন্তু সে কথা সমর্থকেরা মানলে তো! ন্যাশভিলের জিইওডিআইসে স্টেডিয়ামে ম্যাচজুড়েই থেমে থেমে আসছিল ‘মেসি’ ‘মেসি’ গর্জন। এদিন গ্যালারির পুরোপুরি না ভরলেও যথারীতি স্বাগতিক ন্যাশভিলের চেয়ে মায়ামির গোলাপি জার্সির আধিক্য ছিল। এমন সুবিধা নিয়েও ২ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল মায়ামি। মেসি এক গোল ফিরিয়ে দিলেও মায়ামির হার সময়ের ব্যাপার বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল।
শেষদিকে যোগ করা সময়ে লুইস সুয়ারেসের গোলে ২-২ সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ে মায়ামি। ম্যাচ ড্র হলেও প্রতিপক্ষের মাঠে দুই গোলের সুবাদে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে মায়ামিকেই। আগামী বুধবার দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। তবে ম্যাচের ফল ছাপিয়েও মায়ামির বড় স্বস্তি সম্ভবত এই যে, মেসি ঠিকঠাক আছেন।
দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিপক্ষের ভয়ংকর এক ট্যাকলের শিকার হয়েছিলেন মেসি, যে ধরনের ট্যাকলে অনেক ফুটবলারের পা বেঁকে যেতে দেখা গেছে। ন্যাশভিলের মাঠে মেসিদের জন্য কাজটা যে সহজ হবে না, এটা বোঝা যায় ম্যাচের মাত্র চতুর্থ মিনিটেই। কানাডার উইংগার জ্যাকব শ্যাফেলবার্গের দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় ন্যাশভিল। এরপর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া মেসি-সুয়ারেসরা একের পর এক আক্রমণ চালান।
কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছিল না। বল দখল কিংবা আক্রমণ, দুই জায়গাতে এগিয়ে থাকলেও কোনো ভাবে গোলের দেখা পাচ্ছিল না মায়ামি। উল্টো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরেকটি গোল হজম করে বসেন মেসিরা। ম্যাচের ৪৭তম মিনিটে ন্যাশভিল সমর্থকদের আরেকবার গোল উৎসবে মাতান শ্যাফেলবার্গ। কানাডার এ তুরুণ স্ট্রাইকারের জোড়া গোলে জয়ের স্বপ্ন বুনছিল গ্যারি স্মিথের শিষ্যরা।
ম্যাচের ৫২ মিনিটে মেসি-সুয়ারেসের দারুণ রসায়নে ব্যবধান কমায় মায়ামি। বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়ে আর্জেন্টাইন তারকাকে পাস দেন সুয়ারেস। সে বল ধরে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে স্কোরলাইন ২-১ করেন মেসি। এক গোল পেয়ে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে মায়ামি। ন্যাশভিলে রক্ষণে তোলে আক্রমণের ঢেউ। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে ৮৪ মিনিট গোল হজম করে বসে মায়ামি।
তবে ভিএআরের কল্যাণে যে যাত্রায় বেঁচে যান মেসিরা। নির্ধারিত সময়ের পরে ৭ মিনিট বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছিল। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে সের্হিও বুসকেতসের ক্রসে দুর্দান্ত হেডে মায়ামির সমতাসূচক গোলটি করেন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার সুয়ারেস। মায়ামি তো বাঁচল মেসি আর সুয়ারেসের গোলে, তার আগে ৭৭তম মিনিটে মেসি আর মায়ামিভক্তদের - হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল সংশ্লিষ্ট সবারই - কলজেটা চলে এসেছিল জিবের ডগায়।
ন্যাশভিল বক্সের সামনে ন্যাশভিলের এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন মেসি, কিন্তু ওই ডিফেন্ডারের লাথি লাগে মেসির হাঁটুর নিচে। এমন জঘন্য ট্যাকলে অনেকবারই অনেক খেলোয়াড়ের পায়ের হাঁড়গোড় ভাঙতে দেখেছে ফুটবল। পা বেঁকে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে মেসির সৌভাগ্য, তিনি বেঁচে গেছেন। আঘাত গেঁথে যাওয়ার আগেই পা সরিয়ে নিতে পেরেছেন বলেই হয়তো, ব্যথা পেলেও মেসির পা ভাঙেনি। শুশ্রুষা নিয়ে আবার খেলা চালিয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।